Tuesday, August 23, 2011

উড়ন্ত টিকটিকি

উড়ন্ত টিকটিকি
লিখেছেনঃ মাহবুব
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রানী জগতে সবাইকে স্বাগতম। অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও বিভিন্ন প্রানীর সাথে সবাইকে পরিচয় করার প্রয়াস চলছে অনেক আগে থেকেই। আজ উড়ন্ত টিকটিকি (Draco Lizard) সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আট ইঞ্চি এই প্রানীর শরীরটা অনেকটা ভয়ানক ও চলাফেরায় রয়েছে রাজকীয় ভাব। খুব দ্রুত এক ডাল থেকে অরেক ডালে লাফ দেওয়া ও অনেকটা বাদুরের মতো উড়াল দেওয়ার চৌকশ কৌশল আছে তাদের।এ কারনে এদের উড়ন্ত ড্রাগনও বলা হয়।

flying-lizard-draco-gular-flap-wings-extended

বাতাসে ভেসে বেড়ানোর জন্য তাদের দুইটি পাখা ও দ্রুত লাফালাফিতে তাদের লম্বা লেজ সহায়তা করে। এই টিকটিকি সাধারনত মাটিতে নামে না তবে মাটিতে ডিম পেরে ঢেকে রাখে। প্রজনন ও বসবাসের জন্য গভীর জঙ্গলকেই তারা ভালবাসে।

এরা সাধারনতঃ পিঁপড়া ও পোকামাকর খেয়ে জীবন ধারন করে। অনেক সময় সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রানীর খাদ্য হিসেবে তাদেরকে জীবনদিতেও হয়। এদের সাধারনতঃ এশিয়ার ফিলিপাইন, ভারত, বাংলাদেশের গভীর বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।

ভিডিওঃ

http://www.youtube.com/watch?v=caUzdy6QqqE&feature=player_embedded

Friday, January 21, 2011

মানুষও শূন্যে ভাসতে পারে - Flying Man

পরিষ্কার আকাশে ডানা মেলে একঝাঁক পাখি যখন নিজের চোখের সামনে মনের খেয়ালে আকাশে উড়ে অথবা বিকট আওয়াজে মাথার উপর দিয়ে দ্রুতগতির বিমান উড়ে যায় গন্তব্যের দিকে, তখন যে কেউ ভাবতেই পারে- ইস! আমি যদি পাখি হতে পারতাম। যদি আমার পাখির মতো ডানা থাকত! আমরা কখনো যদি কোথা থেকে একবার লাফ দেই পরক্ষণে মধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে আমরা আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। মানুষ আকাশে উড়তে পারে না এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাধার কারণে। তাই বলে মানুষ পারে না এমন কাজ আছে? নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে মানুষ কিন্তু এই মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাভূত করে শূন্যে ভেসে থাকতে পারে। তবে তার জন্য যে সাধনা দরকার তার নাম গভীর ধ্যান। আমাদের পাশের দেশ দক্ষিণ ভারতের এক ভিক্ষুক সুবাইয়া পুলভার ১৯৩৬ সালে দেড়শ' লোকের সামনে টানা ৪ মিনিট শূন্যে ভেসে ছিলেন। মানুষ অবাক হয়েছিল ফকিরের এই কাণ্ডে। ফকির নিশ্চয়ই চালাকি ধরেছে। আসলে ব্যাপারটিতে কোনো চালাকি ছিল না। উৎসুক মানুষ ব্যাপক অনুসন্ধান করে ভিক্ষুকের এই সাহসী কাজের মধ্যে চালাকির লেশ পায়নি। ১৯৩৬ সালে লন্ডন নিউজ ভিক্ষুক সুবাইয়া পুলভারের এই আজব ঘটনার কথা বিশ্বব্যাপী জানিয়ে দেয়, যা তখন বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। সপ্তদশ শতাব্দীতে রোমে পোপ অষ্টম আরবানের সময়ে জোসেফ অব কপারটিনো নামে এক কৃষকের ছেলে লোকজনের সামনে আকাশে উড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সে গির্জার উঁচু বেদির ওপরে প্রজ্বলিত বাতির ওপরে প্রায় ১৫ মিনিট ভেসে ছিল কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার তার শরীরের কোনো অংশ পুড়ে যায়নি। জোসেফ মাঝে মাঝে এরকম আজগুবি কাণ্ড করতেন। যখন শূন্য থেকে নামার সময় হতো তাকে নামার জন্য মই ব্যবহার করতে হতো। তবে অল্প কয়েকদিন পরে মারা যান এই জোসেফ। ডাক্তার এলেন জোসেফের বাড়িতে। ডাক্তার অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন জোসেফের মৃতদেহ মাটি থেকে প্রায় এক ফুট ওপরে ঝুলে আছে। বিখ্যাত জাদুকর জন কিল তার 'জাদু' বইয়ে তিব্বত ও ভারতের শূন্যে ভাসা এমন বেশ কয়েকজন মানুষের পরিচয় দিয়েছেন। জন কিলের বইয়ের বিবরণ থেকে জানা যায় নাইয়াং পা নামক এক তিব্বতি লামা জন কিলের সামনে একটি লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পরে তিনি লাঠির ওপরে পদ্মাসন রচনা করেন। জন কিল ভেবেছেন এটা আসলেই একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়! ভেবেছিলেন হয়তো লাঠির নিচে কোনো গর্ত করা থাকতে পারে। কিন্তু জন কিল ব্যর্থ হলেন। সেখানে এমন কিছুই ছিল না যে, যার ওপরে লোকটি এমন প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন। এছাড়া সেন্ট টেরেসার মেয়ে আভিলা ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মিনিটের পর মিনিট শূন্যে ভেসে থাকতে পারতেন। তিনি ছিলেন সন্ন্যাসিনী। আভিলার শূন্যে ভাষার পারঙ্গমতা দেখে আভিলার অনুসারীরা হা করে তাকিয়ে থাকতেন তার দিকে। কিন্তু নিজের এই অলৌকিক ক্ষমতার ব্যাপারে আভিলার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। বন্ধুরা অবাক হলেও আভিলা মোটেও অবাক হন নি। বান্ধবীদের নিষেধ করেন কথাটা প্রকাশ না করতে। আভিলার নাকি শূন্যে উঠতে মন চায় না। আভিলার ভেতরে এক অদৃশ্য শক্তি নাকি তাকে এই কাজটি করতে বাধ্য করে। আভিলার কথায় এই তথ্য জানতে পেরেছিল তার বন্ধুরা। শূন্যে এ পর্যন্ত যত মানুষ ভেসেছে তার মধ্যে ভিক্টোরিয়ান ডানিয়েল ডগলাস হোম শূন্যে ভেসে থাকার চমক দেখিয়েছেন বেশি। তিনি কেবল শূন্যে ভেসে থাকতে পারতেন না, শূন্যে ভেসে থাকা অবস্থায় যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারতেন। এমনকি ডগলাস যদি চেয়ারে বসে থাকতেন তিনি ইচ্ছা করলে চেয়ারসহ শূন্যে ভেসে থাকতে পারতেন। একবার তিনি নিজের বাড়ির জানালা দিয়ে শূন্যে ভেসে বেড়ানোর জন্য বাড়ির বাইরে বের হলেন। আবার কিছুক্ষণ পরে তিনি বাড়ির অন্য এক জানালা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন। ছোট জানালা দিয়ে আস্ত একটা মানুষের ঢুকে পড়া কম আশ্চর্যের বিষয় নয়। এই সময়ে মাটি থেকে ডগলাসের উচ্চতা ছিল আশি ফুট। তবে ডগলাস যে এখানে চাতুরির আশ্রয় নিতেন তার প্রমাণ কেউ দিতে পারেন নি।

মানুষ কিভাবে শূন্যে ভাসতে পারে তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও ব্যাপারটি যে একবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা তা নয়। মানুষের ধারণা_ যেসব মানুষ কেবল অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী তারাই কেবল মাটি থেকে শূন্যে ভেসে থাকতে পারে। নিয়মিত ধ্যান আর মানসিক শৃক্সখলা এরকম অদ্ভুত শক্তি এনে দিতে পারে বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। শূন্যে ভেসে বেড়ানোর নিয়মটাও বেশ অদ্ভুত। প্রথমে শরীরকে আস্তে আস্তে দোলাতে হবে, তারপর ঘন ঘন দোলাতে থাকলে একসময়ে নাকি নিজের পুরো শরীরটা শূন্যে ভেসে বেড়াবে। তবে ধ্যানে বসার আগে পদ্মাসনে বসতে হবে এবং শূন্য থেকে নামার সময়ে হেলেদুলে নামা চলবে না, ধীরস্থিতভাবে নামতে হবে। তবে এই নিয়মটি যে কেউ প্রয়োগ করলে শূন্যে ভেসে থাকতে পারবে না। তার জন্য সাধনার দরকার। তবে আজো প্রশ্ন, মানুষ কেমন করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাজিত করেছে। কেমন করে সম্ভব শূন্যে ভেসে বেড়ানো। আজো এইসব জটিল প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।


আলমগীর কবীর

Source: Daily Bangladesh Pratidin, 22th January-2011