- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া উদ্যানে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই হয়তো চোখে পড়ে যেতে পারে উড়ন্ত কোনো কাঠবিড়ালি। রাতের নির্জনে চরে বেড়ানো ও খাবার সংগ্রহ করা এই প্রাণীর জন্মগত অভ্যাস। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফ দিয়ে চরে বেড়ায় বলে প্রাণীটির নাম 'উড়ন্ত কাঠবিড়ালি'। কেউ কেউ একে 'উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি'ও বলে থাকেন। তবে এ প্রাণী এখন উঠে এসেছে পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায়। উড়ন্ত কাঠবিড়ালিকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০১১ সালে বিশ্বে মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কাঠবিড়ালি আমাদের কাছে অতি পরিচিত হলেও উড়ন্ত কাঠবিড়ালি একটু অপরিচিতই থেকে গেছে। উড়ন্ত কাঠবিড়ালি সাধারণ কাঠবিড়ালির চেয়ে চলাফেরা ও আকারে একটু আলাদা। উড়ন্ত কাঠবিড়ালি বলা হলেও এরা কিন্তু পাখি বা বাদুড়ের মতো ওড়ে না। তবে বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। প্যাটাগিয়া নামের এক ধরনের বিশেষ পর্দার সাহায্যে কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে এরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, 'এই উড়ন্ত কাঠবিড়ালির ইংরেজি নাম Red giant flying squirrel দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে এদের দেখা মেলে। বাংলাদেশে আরো দুই প্রজাতির উড়ন্ত কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এদের ইংরেজি নাম Hodgson's flying squirrel এবং Particolored flying squirrel. এরা চিরসবুজ বনাঞ্চলের বাসিন্দা। প্রাকৃতিক চিরসবুজ বন যেহেতু কমে যাচ্ছে সেহেতু এদের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। তিন প্রজাতির উড়ন্ত কাঠবিড়ালি ছাড়াও সাত প্রজাতির সাধারণ কাঠবিড়ালি পাওয়া যায় আমাদের দেশে।'
এদের দুই হাত ও দুই পায়ের সঙ্গে শরীরের পাশ থেকে বের হয়ে আসা এক ধরনের স্থিতিস্থাপক চামড়া সংযুক্ত থাকে। এই চামড়া কিছুটা প্যারাশুটের মতো ফুলিয়ে হাওয়ায় ভেসে এক গাছ থেকে আরেক গাছে চলাচল করে এ কাঠবিড়ালি। এরা সাধারণ কাঠবিড়ালির চেয়ে বেশি দূরত্বে লাফিয়ে পাড়ি দিতে পারে। এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে যাওয়ার সময় অনেকক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। আর তা দেখে মনে হবে, এরা আসলে উড়ে উড়েই চলাফেরা করে। বিশ্রামের সময় তাদের ওই শারীরিক প্যারাশুটটিকে চোখে দেখা যায় না। স্থিতিস্থাপকতার কারণে এ প্যারাশুটটি তাদের শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে দেড় শ থেকে দুই শ ফুট দূরত্বে লাফাতে পারে। ওড়ার সময় পেছনের লেজকে এরা লাগাম হিসেবে ব্যবহার করে। বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে দুই থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। পুরনো গাছের গর্তে বা কোটরে এরা বাসা বাঁধে ও বাচ্চা দেয়। জন্মের সময় এরা অন্ধ ও লোমহীন থাকে। এ প্রজাতির কাঠবিড়ালিরা দৈর্ঘ্যে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
সিলেটের লাউয়াছড়া ও রেমা কালেঙ্গায়, চট্টগ্রামের টেকনাফের বন, কাপ্তাই ও বান্দরবানে চিরসবুজ গহিন বনে এরা বিচরণ করে থেকে। ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, নেপাল, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও বাংলাদেশের বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়। সাধারণত গহিন বনাঞ্চলে বিশেষ করে কচি কুমারী বনে এদের বসবাস।
ড. মনিরুল এইচ খান আরো জানান, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি স্তন্যপায়ী ও নিশাচর প্রাণী। সন্ধ্যার দিকে এরা খাবারের খোঁজে আশ্রয়স্থল থেকে বের হয়। আবার ভোর হওয়ার আগেই ফিরে আসে। ফলে সচরাচর এদের দেখা পাওয়া যায় না। ১০-১২ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এরা। তবে বিপন্ন বন্য পরিবেশ ও খাদ্য সংকটের কারণে এদের গড় আয়ু এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিরল প্রজাতির এই প্রাণী বনাঞ্চলে সাধারণত গাছের ফলমূল, বাদামজাতীয় খাবার, গাছের কচি কাণ্ড, ছোট গাছের কুঁড়ি, বীজ, অঙ্কুর, পাখির ডিম, গাছের বাকল, বাকলের নিচের পোকামাকড়, গাছের রস, পানের রস ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
ফিনলে টি কম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, 'আমাদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অনেক সমৃদ্ধ একটি বন। লাউয়াছড়াসহ অন্য বনাঞ্চলগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা না গেলে উড়ন্ত কাঠবিড়ালির মতো একটি মূল্যবান প্রজাতি এ দেশ থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।'
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'উড়ন্ত কাঠবিড়ালিসহ বিভিন্ন দুর্লভ ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে আমরা সর্বদা সচেষ্ট। লোকালয়ে এসে ধরা পড়া প্রাণীগুলোকে আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রায়োজনীয় চিকিৎসা শেষে আবার বনে ছেড়ে দিয়ে থাকি।'
Source: http://www.dailykalerkantho.com
বান্দরবানে উড়ন্ত কাঠবিড়ালি
মিনারুল হক
বার্তা২৪ ডটনেট
বান্দরবান, ৩ মার্চ: বান্দরবানের তারাছা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বিরল প্রজাতির উড়ন্ত কাঠবিড়ালির সন্ধান পাওয়া গেছে। এটিকে প্রাণী বিজ্ঞানীরা উড়ুক্কু কাঠ বিড়ালিও বলে থাকেন। স্থানীয়রা প্রাণীটিকে ধরলেও খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা উদ্ধার করে ডুলহাজারা সাফারি পার্কে পাঠায়। উড়ন্ত কাঠবিড়ালিটি পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীদের তালিকার একটি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার তারাছা ইউনিয়নের ছাইঙ্গা এলাকার নতুন পাড়ার কাছের বনে এ প্রাণীটির সন্ধান পায় স্থানীয়রা। এটি ওইএলাকায় খুবই উৎপাত করছিল। তাই তাকে জাল দিয়ে ধরে ফেলা হয়।
খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা প্রাণীটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এটি লম্বায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো। এর লেজটি প্রায় তিন ফুট লম্বা।
বাংলাদেশে পাওয়া নয় প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে সব চাইতে দুর্লভ প্রজাতির কাঠবিড়ালি হল এই উড়ন্ত কাঠবিড়ালি। এটির নাম red giant flying squirrel বা উড়ন্ত কাঠ বিড়ালি। প্রাণী বিজ্ঞানীরা একে উড়ুক্কু কাঠ বিড়ালিও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম peturista peturista. দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে এর দেখা মেলে। সবুজ বনাঞ্চলে এদের বাস।
মায়ানমার, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, কম্বডিয়া, থাইল্যান্ড, চায়না বাংলাদেশের বনাঞ্চলে এদের কখনো দেখা যায়।
বাংলাদেশে এর আগে এই কাঠ বিড়ালি টেকনাফের বন, কাপ্তাই, লাউয়া ছড়া, রেমা গালেঙ্গার বনাঞ্চলে ধরা পড়ে। তবে এ যাবত বান্দরবানে ধরা পড়া কাঠবিড়ালিটি সবচেয়ে বড় প্রজাতির বলে প্রাণী বিজ্ঞানীরা জানান।
এই কাঠ বিড়ালি patagia নামক এক ধরনের বিশেষ পর্দার সাহায্যে উড়তে পারে। এটি এক গাছ থেকে অন্য গাছে ৩০০ ফুট দূরত্বে লাফাতে পারে।
দেশের প্রখ্যাত প্রাণী বিজ্ঞানী ড. আনিছুজ্জামান খান ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজি আছমত জানান, বিরল প্রজাতির এই প্রাণীটি বনাঞ্চলে সাধারণত গাছের ফলমূল, বাদাম জাতীয় খাবার, কচি কাণ্ড, অঙ্কুর, পাখির ডিম খেয়ে থাকে। গাছের গর্তে বা কোটরে এরা বাসা বাঁধে ও বাচ্চা দেয়। এরা স্তন্যপায়ী ও নিশাচর।
এই প্রাণীটিকে আই ইউ সি এন ( ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর করজারভেশন অফ নেচার) ২০১১ সালে বিশ্বে মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছ
এদিকে বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌছিফুল বারী খান জানান বিপন্ন প্রাণীটিকে গবেষণার জন্য ডুলহাজরা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে।
Source: http://www.barta24.net